বঙ্গবন্ধু বিপিএল সিলেট পর্ব : নিরুত্তাপ ও দর্শক খরায় শেষ হলো প্রথম দিন
স্পোর্টস ডেস্ক:: সিলেটের সঙ্গে ক্রিকেটের নিবিড় সম্পর্ক। এ অঞ্চলের চায়ের কড়া লিকার যেমন উষ্ণ করে প্রাণ, তেমনী ক্রিকেট মানেই সিলেটীদের মনের বাড়তি খোরাক। স্টেডিয়াম গ্যালারি, বৈকি মাঠের বাইরেও দর্শক সামলানো দায় পড়ে।
ফুটবল যেখানে দর্শক পায় না, ক্রিকেটে সেখানে বিরাজ করে দর্শক উন্মাদনা। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে সিলেটে সেই দর্শক উন্মাদনার দেখা মিলেনি বঙ্গবন্ধু বিপিএল মেঘা আসরের খেলায়।
এবারের বিপিএল ৪র্থ পর্বের খেলা বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) বেলা দেড় টা থেকে শুরু হয়েছে। রংপুর আর রাজশাহী রয়েলস’র মধ্যাকার খেলা দিয়ে শুরু বিপিএল সিলেট পর্বে তেমন দর্শক সমাগম দেখা যায়নি।
মাঠের পশ্চিম গ্যালারি ও গ্রীণ গ্যালারিতে কিছু দর্শক দেখা গেলেও কার্যত শূণ্য ইস্টার্ণ ও নর্দান (ভিআইপি) গ্যালারি। মাঠের বাইরেও ফটকে ভীড় নেই। টিকিট কাউন্টারেও নেই মানুষের জটলা। যে কারণে এবার দর্শক শূণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তবে কি প্রচারণার অভাব, নাকি রোদের কারণে বিশাল ইস্টার্ণ গ্যালারি দর্শকহীন।
দর্শক খরার অভিযোগ করে খেলা দেখতে আসা বালুচরের সুফিয়ান আহমদ বলেন, ‘আমি নিজেও জানতাম না বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে বিপিএল শুরু হচ্ছে। বিপিএল নিয়ে অন্যবার প্রচারণা চালানো হলেও এবার প্রচারণা নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সিলেট ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, এবার প্রচারণায় সিলেটে মাত্র চারটি বিলবোর্ড সাটানো হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেলে, স্টেডিয়ামের চারটি ফটকের মধ্যে সব ক’টিতেই ক্রীড়ামোদিদের ভীড় দেখা যায়নি। আবার বিপিএল’র টিকিট বিক্রির জন্য স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে ও নগরের রিকাবিবাজার জেলা স্টেডিয়ামের সামনে টিকিট বিক্রির জন্য বুথ খোলা হলেও নেই ক্রেতা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার স্টেডিয়ামটিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে এ স্টেডিয়ামে আসন সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫৩৩টি। বর্তমানে স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকের গ্যালারি দ্বিতল করা হয়েছে। এ নতুন গ্যালারিতে আসন সংখ্যা থাকছে তিন হাজার ৬৬০টি। ৬১৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৮৫ ফুট প্রস্থের স্টেডিয়ামে সবমিলিয়ে আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ১৯৩টি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিলেট ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মারিয়া চৌধুরী মাম্মি বলেন, ‘আমি মাঠে আসিনি, তাই এ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও বিপিএল সিলেট পর্বের মিডিয়া ম্যানেজার ফরহাদ হোসেন বলেন, এবার ইস্টার্ণ গ্যালারিতে টিকিটের মূল্য ৩০০ টাকা, দু’তলার উপরে ৫০০, ওয়েস্টার্ণ গ্যালারি ২০০, গ্রীণ গ্যালারি ২০০ এবং গ্রেন্ড স্ট্যান্ড ২০০ ভিআইপি গ্যালারি ২ হাজার টাকা রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের একমাত্র গ্যালারি সমৃদ্ধ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাড়ে ১৮ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে খেলা উপভোগ করতে পারেন।
২০০৭ সালে স্টেডিয়ামটি নির্মিত হয়। ২০১৪ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু অভিষিক্ত হয়। ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৭ বিপিএলের ছয়টি এবং ২০১৮ সালের বিপিএলের আটটি খেলা, বাংলাদেশ-শ্রীলংকার একটি ওয়ানডে এবং বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি ম্যাচও এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়া সবকটি খেলায়ই দর্শকরা স্টেডিয়ামের গ্যালারি মাতিয়েছেন।
বিশেষ করে বিপিএলের গত আসরে সিলেট পর্বে রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে। প্রথমেই ‘সোনার হরিণ’টিকিট চলে যায় কালোবাজারে। সেবার অনেকেই আগের রাত থেকেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের বুথে হাজারো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন; যার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারেরও বেশি ছিল। চাহিদার তুলনায় টিকিটের সংখ্যা কম থাকায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই হাহাকার শুরু হয়েছিল। অনেকেই দীর্ঘসময় লাইনে দাড়িয়ে টিকেট না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরে গেছেন।
ফলে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলেছিল বিপিএল। কিন্তু এবার সেই চিত্র যেনো একেবারে ভিন্ন।