তৃতীয় দিনে গড়াল রিফাত হত্যার শেষ সাক্ষ্যগ্রহণ
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার শেষ সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের সাক্ষ্যগ্রহণ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে শুরু হয় তার সাক্ষ্যগ্রহণ। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী চলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা তার সাক্ষ্যগ্রহণ অসম্পূর্ণ অবস্থায় মুলতবি ঘোষণা করেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরকে আসামিপক্ষের ৯ জন আইনজীবী জেরা করবেন বলেও তিনি জানান।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সিআইডির আইটি স্পেশালিস্ট জাকির হোসেন ইমন এবং সিআইডির অপর আইটি স্পেশালিস্ট নাজমুল হাসানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার থেকেই আদালতে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর।
এছাড়া এ মামলার আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন বাতিলের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেনের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। মিন্নির আইনজীবীর সময় প্রার্থনার জন্য আদালত তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে সকালে বরগুনার জেলা কারাগারে থাকা এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এছাড়া আদালতে হাজির হন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৫ কার্যদিবসে এ মামলার ৭৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করার পাশাপাশি শেষ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান। এছাড়া গোলাম সরোয়ার নামে একজন সাক্ষী প্রবাসে থাকায় তার সাক্ষ্যগ্রহণ করতে পারেনি আদালত।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মুজিবুল হক কিসলু বলেন, ইতোমধ্যে রিফাত হত্যা মামলার ৭৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মঙ্গলবার থেকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেষ সাক্ষী বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবিরের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। কিন্তু দুদিনেও তার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। বৃহস্পতিবার তদন্তকারী কর্মকর্তার বাকি সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দুই সাক্ষীকে হুমকি দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির জামিন বাতিলের আবেদন করেছিল গত ৮ জানুয়ারি। এ জন্য আদালতের নির্দেশে সাক্ষীদের হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন বরগুনা সদর থানার ওসি। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু মিন্নির আইনজীবী সময় প্রার্থনা করায় মঙ্গলবার এবং পরদিন বুধবারও শুনানি হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড ঘটে। গত ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক। পাশাপাশি রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ছয় আসামি জামিনে। বাকিরা কারাগারে।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।