করোনা মোকাবিলায় চীনের সফলতার রহস্য!

 চীন করোনা মোকাবিলায় প্রায় সফল বলা চলে। কিন্তু কীভাবে এই সফলতা এলো চীনের! সেটা অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ এখন পর্যন্ত সফলভাবে করোনার কোন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়নি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চীন যে কিউবার ওষুধ প্রযুক্তি ইন্টারফেরন আলফা টু-বি ব্যবহার করছে। এই খবর ইতোমধ্যেই বিশ্ববাসী জেনে গেছে। মেডিক্যাল সাইন্সে কিউবা অনেক এগিয়ে। প্রায় ৬০ বছর ধরে কিউবা মার্কিন অবরোধের মাঝেও নানান রোগের ভ্যাকসিন নিয়েও গবেষণা করছে। ১৯৮৫ সালে তারা মেনিনজাইটিসের ভ্যাকসিন বের করে। কিছুদিন আগে তারা লাঙ ক্যানসারের ভ্যাকসিনও বের করেছে। মা থেকে সন্তানে এইচআইভি ছড়ানো পুরোপুরি বন্ধ করতে পেরেছে তারা ২০১৫ সালে। বিশ্বের অন্যতম বড় মেডিক্যাল কলেজটিও (ইএলএএম) কিউবায়। প্রায় ১১০টি দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে যায়। টিউশন ফি ছাড়াই সেখানে পড়ে সকলে।

এখন জানা দরকার ইন্টারফেরন কী?

অনলাইন মিডিয়া থেকে জানা যায়, ইন্টারফেরন হলো প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন। কোন দেহকোষ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি নিঃসৃত হয়। বহিরাগত ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক,বিষ ও অন্য কোনো বস্তু ইত্যাদির আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি দেহে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকে, এটি দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র ( Immune system)। ইন্টারফেরনস হল প্রোটিন জাতীয় রাসায়নিক প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র যা দেহের প্রতিরক্ষা তন্ত্রের অন্তর্গত। ভাইরাস দ্বারা আক্রমণের পর যখন ইন্টারফেরন নিঃসৃত হয় তখন তা আক্রমণকারী ভাইরাস এর প্রোটিন সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে, ফলে ভাইরাসটি আর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেনা। তাই সে পরবর্তী কোষগুলোকে আর আক্রমণ করতে পারেনা।কাজেই সংক্রমিত কোষের চারপাশের কোষগুলো ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়, অধিকন্তু এরা ভাইরাস-প্রতিরোধক্ষম হয়ে ওঠে। কাজেই ইন্টারফেরন এর কাজ হলো আক্রমণকারী ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়া এবং সুস্থ কোষগুলোকে ভাইরাস প্রতিরোধক্ষম করে তোলা ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। AIJ Lindenmann ১৯৫৭ সালে ইন্টারফেরন আবিষ্কার করেন।

ইন্টারফেরন একটি প্রজাতি নির্দিষ্ট হরমোন, এমনকি একই দেহের বিভিন্ন টিস্যু থেকে বিভিন্ন প্রকার ইন্টারফেরন তৈরি হয়। ভাইরাস আক্রান্ত লিউকোসাইট থেকে এক ধরনের ইন্টারফেরন,ফাইব্রোব্লাস্ট কোষ থেকে অন্য ধরনের ইন্টারফেরন নিঃসরণ হয়। ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত কোষ কর্তৃক ইন্টারফেরন নিঃসৃত হলেও বর্তমানে রিকম্বিনেট ডিএনএ কৌশল প্রয়োগ করে অধিক পরিমাণে ইন্টারফেরন উৎপন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারফেরন প্রয়োগ করে জটিল হেপাটাইটিস বি, হার্পিস সংক্রমণ, বিভিন্ন ধরনের প্যাপিলোমা চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসায়ও সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গবেষকগণ ধারণা করছেন যে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রহিত করতেও ইন্টারফেরন সফলভাবে ব্যবহার করা যাবে।

বাংলাদেশ কিউবার খুব পুরাতন বন্ধু দেশ। তাই যে কোন মুহূর্তেই বাংলাদেশ সরকার দেশের এই সম্ভাব্য সংকটকালে কিউবার সাহায্য নিতে পারে, যেমনটি করেছে চীন।

 

আরও