বাংলাদেশের সামনে কী অপেক্ষা করছে
ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় গত ২১ ফেব্রুয়ারি। এক মাস পর আজ ২১ মার্চে দেশটিতে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩২ জন। আক্রান্ত রোগী ৪৭ হাজার। এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ বলতে পারছে না। করোনাভাইরাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এখন ইতালিতেই। চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাস এখন ১৮৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে মারা গেছে ৬২৭ জন। এর আগে পৃথিবীর কোনো দেশে এক দিনে এত মানুষ মারা যায়নি। যদিও বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। গোটা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
এমন অবস্থায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে ফিরছেন। বলাই বাহুল্য, তারা দেশের ১৬ কোটি মানুষকে আতঙ্কে রেখেছেন। কিন্তু তারা সচেতন হলেই কেবল রক্ষা পেতে পারে এই দেশ। রক্ষা পেতে পারেন ওই প্রবাসীদের পরিবার। এ জন্য দেশে আসা সকল প্রবাসীদের উচিত, পরিবার, সমাজ সব খান থেকে অন্তত ১৪ দিন নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। তাহলেই কেবল দেশ কিছুটা রক্ষা পেতে পারে এই ছোঁয়াচে ভাইরাস থেকে।
এই প্রবাসীরা যদি এখনই সচেতন না হোন, তাহলে বাংলাদেশকে এর কঠিন মূল্য দিতে হবে। প্রশাসনের অনেকেই মাঠে নেমেছেন প্রবাসীদের ১৪ দিন বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য। যারা কোয়ারেন্টিনে থাকছেন না, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অথচ ওই প্রবাসীদের উচিত ছিল, নিজেরাই কোয়ারেন্টিনে চলে যাওয়া। নিজের পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে এবং দেশকে বাঁচাতে এটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রবাসীদের বেশিরভাগ অংশ সেটা করছেন না।
চীনের উহানে যখন এই ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে, তখন থেকেই বাংলাদেশের সচেতন হওয়া উচিত ছিল। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা করেনি। চীনের সঙ্গে পৃথিবীর অনেক দেশ যখন সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করেছে, তখন বাংলাদেশে অবাধে চলাফেরা হয়েছে চীনের সঙ্গে। ঠিক একইভাবে পরে যখন ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিলো, তখন বিশ্বের অনেক দেশ ফ্লাইট বন্ধ করে দিলো। তখনও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ইতালি ফেরত অনেকে। যারা এখন আমাদের সবার জন্য হুমকি।
সরকারি হিসাবমতে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যু হয়েছে গত ১৮ মার্চ। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন। প্রায় প্রতিদিন ৩ জন করে আক্রান্তের হিসাব দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত ওই ২০ জনের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজন। এরইমধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দিন দিন সেই দাম শুধু লাফিয়ে বাড়ছে। দেশের একটি উপজেলা লকডাউন বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইট চালু আছে।
ইতালিতে এক মাসের ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বলা যাচ্ছে না, বাংলাদেশে এক মাসে কতজন এই ভাইরাসে প্রাণ হারাবে। বাংলাদেশের সামনে কী অপেক্ষা করছে, তা কেউ বলতে পারছে না। এমনকি গোটা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তাও বলা যাচ্ছে না। তবে সঠিক সিদ্ধান্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ না নিতে পারলে বাংলাদেশের জন্য আগামী দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, আমাদের অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়ে এই ভয়াবহ ভাইরাসের মহামারি ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে সব কিছু বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে হলেও কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে সর্বশেষ খবর হলো, করোনাভাইরাসের কারণে চারটি ফ্লাইট ছাড়া দেশের সব বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আজ রাত ১২টা থেকে, যা চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেক দেরিতে হলো, আরও আগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।
বিদেশি ফ্লাইট তো বন্ধ হচ্ছে, দেশের ভেতরে থাকা প্রবাসীদের কী হবে। অবশ্যই ১০০ ভাগ প্রবাসীকে কোয়ারেন্টিনে আনতে হবে। তবে আশঙ্কার কথা হলো, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব হতাশাজনক অবস্থানে রয়েছে।
দেশের সব সিভিল সার্জন অফিস থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হিসাবমতে, চলতি বছরের ৯ মার্চের পর বিদেশ থেকে যারা দেশে আসবেন তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। ওইদিন থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে এসেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ১১৬ জন। তাদের মধ্যে কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ৯১০৬ জন, শতকরা হিসাবে যা ৮ শতাংশ।
এমনটা চলতে থাকলে কী হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তবে ইতালি, চীন বা স্পেনের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে যেন বাংলাদেশ না পড়ে, সেই প্রত্যাশা।
এত সংকটের মধ্যে আশার দিক হলো, বাংলাদেশ এরই মধ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট উৎপাদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সেই কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানি করার অনুমোদন পেয়েছে। তারা যুক্তরাজ্য থেকে তা নিয়ে আসছে। সরকার এরই মধ্যে চীন থেকে ১০ হাজার কিট নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে। বাকিটা ভবিষ্যতই বলে দেবে…