নিউ ইয়র্কে ৯০ দিনের জন্য মর্টগেজ লোন মওকুফ
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আমেরিকা। ১৮ মাস পর্যন্ত এর জের টানতে হতে পারে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মার্কিন সরকার। নাগরিকদের জন্য ইতিহাসের বৃহত্তম অর্থ সাহার্য ঘোষণার পর ব্যাংক ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড বিল নিয়ে সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সরকার।
অঙ্গরাজ্য সরকার মনে করছে, অনেক নাগরিক তাদের মর্টগেজ, ব্যাংক ঋণ, ক্রেডিট কার্ড বিল ও বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তিত। তাই বিষয়টি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের আশার বাণী শোনালেন রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। নাগরিকদের অর্থনৈতিক প্রণোদনা হিসেবে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো বিলম্ব ফি মওকুফ করছে। ক্রেডিট কার্ড, বাড়ির মর্টগেজ, বাড়ি ভাড়াএসব নিয়ে ভাবনা বা দুশ্চিন্তা না করতে নাগরিকদের বলা হচ্ছে।
প্রতিটি নগর, রাজ্য ও ফেডারেল পর্যায়ে এসব উদ্বেগ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নিয়ে কোনো বিরূপ পদক্ষেপ না নিতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বাড়ির মালিকদের জন্য ৯০ দিনের মর্টগেজ লোন মওকুফ করেছেন। নাজুক পরিস্থিতিতে এই সময়সীমা আড়াই বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া লেট ক্রেডিট কার্ড বিল, ক্রেডিট রিপোর্ট স্থগিতেরও ঘোষণা দেন কুমো।
প্রথম অস্থায়ী করোনাভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে নিউইয়র্ক নগরের স্ট্যাটেন্ট আইল্যান্ডে। সবার জন্য টেস্টিং সুবিধাটি গতকাল সকাল থেকে সিভিউ অ্যাভিনিউর কাছে সাউথ বিহেভিওরাল হেলথ সেন্টারের পার্কিং লটে পাওয়া যাচ্ছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ড প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ১৮ মার্চ ম্যানহাটনে এসেছে। কেন্দ্রটি চালাতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই কেন্দ্র খোলা থাকবে। যেকোনো ব্যক্তি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এই সেবা নিতে পারবেন। এ ছাড়া অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টির নিউ রোচেল ও লং আইল্যান্ডের জোন্স বিচে আরও দুটি কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মেয়র বিল ডি ব্লাজিও বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে ৮৮৮-৩৬৪-৩০৬৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। শিগগিরই শহরে কিছু ওয়াক-ইন সাইট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
করোনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আমেরিকায় প্রায় ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই এই সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে নিউইয়র্কে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের, আক্রান্ত হয়েছে চার হাজারের বেশি। নিউইয়র্কে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন যে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিকেও এখন এই বিপর্যয় মোকাবিলায় অপ্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নৌবাহিনীর ভাসমান হাসপাতাল নিউইয়র্কে পাঠিয়েছে। হাসপাতালগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও পর্যাপ্ত বেড নেই এমন মহামারি সামাল দেওয়ার।
এদিকে নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকায় ১৮ মার্চ পর্যন্ত অন্তত নয়জন বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পারিবারিকভাবে এসব ভাইরাস আক্রান্তদের নাম পরিচয় প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে অবশ্য কিছু জানা যায়নি।
অন্যদিকে, নিউইয়র্ক সিটি ক্যাব ও উবার চালকদের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভাগাভাগি যাত্রী ওঠা-নামা তথা রাইড শেয়ার (পুল-কল) বন্ধ করা হয়েছে। তবে, উবার ইট কিংবা উবার-এক্সসহ অন্যান্য পরিষেবা খোলা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভাইরাসে যখন জনজীবন স্থবির হয়ে গেছে, তখন অনেকে নিজ উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কাজ করছেন। ভেঙে পড়া জনসাধারণের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছেন।