ঈদে জঙ্গি হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই : র্যাব
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৫:৩৩,অপরাহ্ন ২১ এপ্রিল ২০২৩ | সংবাদটি ৫২ বার পঠিত
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, গোয়েন্দা ও সাইবার মনিটরিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার ব্যাপারে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি র্যাব। তবে যেকোনো নাশকতা ও হামলা মোকাবিলায় র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও কমান্ডো টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোষাকে টহল জোরদার থাকবে।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১১টায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন ও সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে ব্রিফ্রিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষ্যে এই মুহূর্তে মার্কেট, বিপণী বিতানগুলোতে প্রচুর বেচা-কেনা, আর্থিক লেনদেন ও জনসমাগম হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভেজাল খাদ্য বিক্রির বিষয়টিও আমরা মাথায় রেখেছি। ঘরমুখো মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য আমরা ব্যাটালিয়নগুলোতে সাপোর্ট সেন্টার চালু করেছি। সেখান থেকে ঘরমুখো মানুষেরা অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ পানি ও ইফতারের ব্যবস্থা রেখেছি।
‘ঈদুল ফিতরের নামাজের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। ঈদে ঢাকার দোকানপাট ও ঘরবাড়ি খালি থাকে। এই সময়টায় আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক বছরের মতো এবারও সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রত্যেক ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন রেখেছে। দেশব্যাপী ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কন্ট্রোল রুম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, ফুট মোবাইল প্যাট্রল, সিসি টিভি মনিটরিং, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, রিজার্ভ ফোর্স, অবজারভেশন পোস্ট ও চেকপোস্ট থাকবে। এছাড়া বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডসহ সব উইংকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের ঘরে ফেরা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশব্যাপী র্যাবের সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, রেল স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় র্যাব সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সড়ক ও নৌ পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, হয়রানি বন্ধ, চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারীসহ মলমপার্টি ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বাস, পিকআপ, লেগুনা ইত্যাদি যানবাহনগুলোর চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না তা যাচাই করা এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন টার্মিনাল ও আশপাশের স্থানগুলোতে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সড়ক ও নৌ পথে চালকেরা যেন প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাস ও লঞ্চ চালনা না করে সেজন্য মালিক ও চালকদের সতর্কীকরণ ও সচেতন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেন চলাচল না করতে পারে সেজন্য চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহে (জাতীয় ঈদগাহ, শোলাকিয়া ঈদগাহ ও দিনাজপুর বড় ঈদগাহ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহসহ গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহে ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কর্তৃক নিরাপত্তা সুইপিং করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সিসিটিভি কাভারেজ থাকবে। এছাড়া পর্যাপ্ত ইউনিফর্ম ও সাদা পোষাকে টহল পরিচালনা করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ শপিং মল, বিপণী বিতান ও জন সমাগমপূর্ণ এলাকায় স্ট্যাটিক টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে; যাতে করে সাধারণ জনগণ উৎসব মুখর পরিবেশে এবং নিরাপদে কেনাকাটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষের বাসস্থান, কর্মস্থল, শপিংমলসহ অন্যান্য স্থানে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে র্যাবের নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) জেলাসহ সারাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধের সময়ে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয় সে বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।’
‘ব্যাটলিয়নগুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে। র্যাব সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরের (০১৭৭৭৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে। যেকোনো নাশকতা/হামলা মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে নাশকতাসহ যেকোনো ধরনের উদ্ভুত পরিস্থিতি কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’
‘জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে জঙ্গিদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব। ভার্চুয়াল জগতে ঈদকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে র্যাব সাইবার মনিটরিং টীম অনলাইনে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রাখছে।’
এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘ঈদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আসা নারীদের উত্যক্ত, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি রোধে মোবাইল কোর্টসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ কোনো ধরনের হেনস্তার শিকার হলে অবশ্যই কর্তব্যরত র্যাব সদস্যদের জানাবেন। র্যাব কঠোর হস্তে জড়িতদের স্তারুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। র্যাব সদর দপ্তর সার্বিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করবে।