পিঠা উৎসবে মুখোরিত সানশাইন মডেল হাই স্কুল
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪১:৩৯,অপরাহ্ন ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | সংবাদটি ৯২ বার পঠিত
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো বাহুবলের মিরপুর সানশাইন মডেল হাইস্কুলে পিঠা উৎসব। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে পিঠা-পুলি। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা উৎসব।
গ্রামীণ ঐতিহ্য ও নতুন প্রজন্মের কাছে হরেক রকমের পিঠার পরিচয় তুলে ধরতে বাহুবল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সানশাইন স্কুল মডেল স্কুলে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব। যখনই শীতের আমেজ আসে তখনি পিঠা-পুলি, পায়েস কিংবা নাড়ুর কথা আমাদের মনে ভেসে ওঠে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই পিঠা উৎসব বিলুপ্তির পথে। বাঙালির এই পিঠা উৎসবের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে সানশাইন মডেল হাইস্কুলে বর্ণাঢ্য পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর ) দিনব্যাপী এই পিঠা উৎসবের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন হবিগঞ্জ ১ (বাহুবল- নবীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু। এ সময় তিনি স্টলে স্টলে গিয়ে প্রতিটা পিঠার স্বাদ উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে সানশাইন মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় স্কুলের পরিচালক এম সামছুদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুনিম বাবু বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা, এত সুন্দর হরেক রকম পিঠা তৈরী করেছে ।
এ পিঠা দেখে মনে হয় এরা ভবিষ্যতে আমাদের কারিগর। মুনিম বাবু আরও বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালিদের হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। স্কুলে গ্রামের পিঠা-পুলির আমেজকে ফুটিয়ে তুলতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে সানমাইন স্কুল কর্তৃপক্ষ । এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠা-পুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি।। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামিলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি লন্ডন প্রবাসী আক্তারুজ্জামান নাসির, আওয়ামীলীগ নেতা রাজন চৌধুরী, মিরপুর লামাতাশি ৫ গ্রাম নেতা মো: ফয়সল আহমেদ, জাতীয় পার্টির নেতা ডা: এমদাদুল হক সবুজ,উপজেলা আওয়ামিলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুকুর রশিদ ফারুক , সিলেট বেতারের গীতিকার এম আর মামুন, সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল তহবিলদার সবুজ, মো: জাবেদ আলী, মো: কামরুল ইসলাম, শিক্ষক মুজিবুর রহমান, ফয়সল আহমেদ শিপন, লিটন দেব সহ আরো অনেকই। দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ উৎসবে হরেক রকমের পিঠার পসরা নিয়ে বিভিন্ন স্টল সাজান স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পিঠা উৎসবে স্কুলের ৫ম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা ১৬ টি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন । চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। স্টলে স্টলে সারি সারি পিঠার মনোমুগ্ধকর প্রদর্শন। কেউ বানিয়েছেন নবাবি সেমাই, কেউ বানিয়েছেন দুধচিতুই, সেমাই পিঠা, ভাপা পুলি পিঠা,গোলাপ পিঠা, আতাফল সন্দেশ, ঝাল কদম, দুধের সন্দেশ, ডালের পিঠা, ফুল পিঠা, বাহারি গোলাপ, বউপিঠা, জামাই পিঠা, পুলি পিঠা ও চন্দ্র পুলি, চিকেন ঝাল পিঠা, কাবাবী সেমাই, পাকন পিঠা, ঝিনুক পিঠা, পাটিসাপটাসহ নানা নামের ও বিভিন্ন রংয়ের শত রকমের মুখরোচক পিঠা স্থান পায় স্টলগুলোতে।
ভোজন রসিকরাও এসে পিঠা খেয়ে নানা প্রশংসা করছেন। আর আয়োজকরা বলছেন প্রতি বছরই এমন আয়োজন থাকবে নতুন প্রজন্মের কাছে পিঠা পুলির পরিচিতির জন্য। সানশাইন মডেল হাইস্কুল চত্ত্বরে শুরু হওয়া এ পিঠা উৎসবে ছিল বেশ ভিন্নতা। গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য নাম ছিল স্টল গুলোর। শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তৈরি করা এসব পিঠা সাজিয়েছেন তাদের স্টলে। শোভা পাচ্ছে- পিয়াসা, পাটি সাপটা, আন্দসা, চিতই, ভাপা, পুলি, সরু, মালাই রোল সহ শতাধিক ধরণের পিঠা সাজানো রয়েছে স্টলে। ভোজন রসিকরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর স্বাদ নিচ্ছেন। সেই সাথে অনেকে এসেছেন তাদের সন্তানদেরকে পিঠা পুলির স্বাদের পাশাপাশি পিঠার সাথে পরিচয় ঘটাতে। স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন, সাবেক সংসদ সদস্য মুনিম চৌধুরী বাব সহ অতিথিরা । সানশাইন স্কুলের পরিচালক এম সামছুদ্দিন জানান, গ্রামগঞ্জে বিশেষ করে শীতকালে নানা ধরণের পিঠাপুলি তৈরি হয় প্রতিটি বাড়িতে। অনেক পিঠার সাথেই আমাদের পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক পিঠার নাম জানা থাকলেও স্বাদ মনে নেই। আজকের এই পিঠা উৎসবে অনেক পিঠা খেয়ে ছোট বেলার অনেক স্মৃতিই মন করিয়ে দেয়। এভাবে শীতের পিঠা উৎসব হোক গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। তিনি জানান, ২০০৪ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৮শ ছাত্র ছাত্রী লেখাপড়া করছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে মুলত এ আয়োজন।
পিঠা উৎসব উপভোগ করতে আসা শিক্ষার্থী শৈলীদেব সেতা ,বলেন, বিদেশী অনেক খাবার আমাদের দেশে জায়গা করে নিয়েছে। যার ফলে মায়েদের হাতের অনেক পিঠা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রতিবছর পিঠা উসবের আয়োজন করা হলে নতুন প্রজন্ম দেশি পিঠায় পরিচিত হতে পারবে। শিক্ষার্থী পুষ্পিতা রাণী দেব, বলেন, পিঠা শুধু খাবার নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার প্রাণে। উৎসবের এই আমেজে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দিন জানান, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই উৎসবের আয়োজন। উৎসবে শিক্ষার্থীদের তৈরী স্টলগুলো ছিল নানা বৈচিত্রের পিঠার সমারোহ। এছাড়াও উৎসবে পিঠা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়। রকমারি পিঠা ঘরের দলনেত্রী আর্ট এন্ড সাংস্কৃতি শিক্ষিকাজানান, গোলাপ পিঠা, দুধ চিতুই, দুধ, পুলি, ছানার সনদেশ, নকশা পিঠা, সহ ৫০ জাতের পিঠা তৈরী করেছেন। তিনি শুরুতেই ৫ হাজার টাকা বিক্রি করছেন সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। বাঙ্গালী পিঠাঘরে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়েছে। তারা ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে সবমিলেয়ে।