শ্রীপুরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ব্যবসায়ী নিহত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২১:৪৭,অপরাহ্ন ০৩ আগস্ট ২০২৪ | সংবাদটি ২১ বার পঠিত
গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি তার আত্মীয় চন্নাপাড়া গ্রামের মো. কাজল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই গ্রামের মক্কা-মদিনা স্পিনিং কারখানার সামনে লেপ-তোশকের ব্যবসা করতেন।
কাজল মিয়া সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে জাহাঙ্গীর আলম দোকানে ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে তিনি খবর পান, সড়কে জাহাঙ্গীরের লাশ পড়ে আছে। এরপর তাকে উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য মাওনা চৌরাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। পথেই তার মৃত্যু হয়। তবে গুলিতে নাকি পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে পারিনি।
এদিকে, সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সংবাদকর্মীরা নিহত ব্যক্তির ভাড়া বাসার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে মাওনা-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভকারীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা ছবি তোলার সময় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে ধাওয়া দেন।
এর আগে সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার বেলা ১১টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নেয়। সরকার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মাওনা চৌরাস্তার ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা যায়। কিছু সময় পর ছাত্ররা লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল নিয়ে মাওনা ফ্লাইওভার এলাকায় যায়। এ সময় ছাত্ররা পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেয়। পরে ছাত্ররা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে ফিরে যায়।
কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মাওনা ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নেয় এবং খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। এরপর ফের ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় আসে এবং মাওনা হাইওয়ে, গাজীপুর জেলা পুলিশ, শ্রীপুর থানা-পুলিশের তিনটি বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরে উত্তেজিত ছাত্ররা আশপাশের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়।
পরে ছাত্ররা একত্রিত হয়ে মাওনা-শ্রীপুর সড়কের ভাই ভাই সিটি কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়া পুলিশের লক্ষ্য করে দুয়োধ্বনি দেয়। ওই কমপ্লেক্সে থাকা তিনটি পুলিশ ভ্যানসহ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিকেল ৩টার দিকে শ্রীপুর সড়কের বকুলতলা এলাকায় মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের একজন সমন্বয়ক ইসরাত জাহান দাবি করেন, আজ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আলহেরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন লোককে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ছোটাছুটি করার সময় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। মরদেহ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা ব্যস্ত আছি।