ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ কিয়েভ
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৪০:৫২,অপরাহ্ন ২০ নভেম্বর ২০২৫ | সংবাদটি ৫ বার পঠিত
ওয়াশিংটন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া একটি খসড়া পরিকল্পনা মেনে নিতে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তাদের ওই প্রস্তাবে কিইভকে ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছাড়তে এবং কিছু যুদ্ধাস্ত্র ত্যাগে রাজি হতে বলা হয়েছে, এ সম্বন্ধে অবগত দুই ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব বলেছেন।
সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় নাম-পরিচয় প্রকাশে রাজি না হওয়া ওই সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন প্রস্তাবের মধ্যে আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর আকার ছোট করার কথাও আছে। ওয়াশিংটন চাইছে ইউক্রেনের রাজধানী কিইভ যেন পরিকল্পনার মূল মূল প্রস্তাবগুলো মেনে নেয়।
পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকা এখন ইউক্রেইনের দখলে নেই তা মস্কোকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে কিইভ ও ইউরোপে ভবিষ্যৎ যে কোনো রুশ আগ্রাসন মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রস্তাবগুলোতে, বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম।
তথাকথিত এ নতুন ‘মার্কিন পরিকল্পনার’ বিষয়ে ইউরোপীয় এক কূটনীতিক বলেছেন, “এগুলো ‘কিইভকে আরও কোনঠাসা’ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন চেষ্টা। ইউক্রেইনের অবস্থান এবং ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের কথা বিবেচনায় না নিয়ে কোনো সমাধানই হতে পারে না, বলেছেন তিনি।
আরেক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন, ইউক্রেইনকে সামরিক বাহিনী ছোট করে ফেলার যে কথা বলা হচ্ছে, তাকে গুরুতর কোনো প্রস্তাব মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে রাশিয়ার দাবি।
এমন এক সময়ে এ পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে এল যখন পূর্ব ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক গ্রাম জেলেনস্কি বাহিনীর হাতছাড়া হচ্ছে। ইউক্রেইনের এ প্রেসিডেন্টকে এখন বড় এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারিও সামলাতে হচ্ছে, যার কারণে দেশটির পার্লামেন্ট জ্বালানি ও বিচারমন্ত্রীকে বরখাস্তও করেছে।
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সংঘাতে লিপ্ত দুই পক্ষের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওয়াশিংটন যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য উপায়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করছে।’ তিনি বলেন, “ইউক্রেইনে যেটা হচ্ছে, তার মতো জটিল ও প্রাণঘাতী যুদ্ধে ইতি টানতে গুরুতর এবং বাস্তবসম্মত ধারণার ব্যাপক আদানপ্রদান জরুরি। আর স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে উভয় পক্ষকেই কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় ছাড় দিতেই হবে।”
ইউক্রেইনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধে একগাদা মার্কিন প্রস্তাবের বিষয়ে ‘সঙ্কেত’ পেয়েছে কিইভ, যে প্রস্তাবগুলো নিয়ে ওয়াশিংটন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছে। এসব প্রস্তাব তৈরিতে ইউক্রেইনের কোনো ধরনের ভূমিকাই ছিল না, বলেছেন তিনি।
বুধবার তুরস্কে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে বৈঠক করতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দল কিইভ পৌঁছেছেন। শান্তি আলোচনা অগ্রসর করার লক্ষ্যেই এসব বৈঠক হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন সেনা সচিব ড্যান ড্রিসকলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ‘তথ্য অনুসন্ধান অভিযানে’ কিইভ এসেছেন বলে জানিয়েছে কিইভের মার্কিন দূতাবাস। সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল র্যান্ডি জর্জও ওই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। তাদের দুজনেরই বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির সঙ্গে বসার কথা।
টেলিগ্রামে করা মন্তব্যে জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে কিছু না বললেও সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন নেতৃত্বকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “রক্তপাত বন্ধ ও স্থায়ী শান্তি অর্জনে আমাদের সব অংশীদারদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে এবং মার্কিন নেতৃত্বকে দৃঢ় ও কার্যকর থাকতে হবে।”
‘যুদ্ধের চূড়ান্ত অবসানের মতো যথেষ্ট ক্ষমতা’ কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পেরই আছে, মন্তব্য করেন তিনি। জেলেনস্কি জানান, এরদোয়ান আলোচনার বিভিন্ন ধরন প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তুরস্ক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”
জুলাইয়ে ইস্তাম্বুলে বৈঠকের পর কিইভ ও মস্কোর কর্মকর্তাদের মধ্যে আর কোনো মুখোমুখি বৈঠক হয়নি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সাফল্যের গতিও বাড়ছে, ইউক্রেইনজুড়ে তাদের হামলার মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা, জেলেনস্কির দৌড়ঝাঁপ সব মিলিয়ে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর উদ্যোগ গতি পেয়েছে বলেই মনে হচ্ছে, যদিও রাশিয়া তাদের আগের শর্তগুলো থেকে সামান্য সরেছে এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিইভকে দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটো জোটে অন্তর্ভুক্তির ইচ্ছা ত্যাগ এবং দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলে আসছেন। এই চার অঞ্চলকে মস্কো রাশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে।
তবে ইউক্রেইন বারবারই বলে আসছে, তারা রাশিয়ার এসব শর্তের কাছে মাথা নোয়াবে না।




