ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় রুয়ান্ডা ও ডিআর কঙ্গোর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩০:৩৬,অপরাহ্ন ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | সংবাদটি ২ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ওয়াশিংটনে শান্তিচুক্তি সই করল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) ও রুয়ান্ডা। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান চেষ্টায় দুই দেশের নেতাদের এই সমঝোতা নতুন অধ্যায় খুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তির আগে কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট বলে ধারণা করা এম২৩ বিদ্রোহীদের লড়াই আবারও তীব্র হয়ে ওঠে। কঙ্গো সেনাবাহিনী অভিযোগ তোলে—বিদ্রোহীরা ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি প্রক্রিয়া ভণ্ডুলের চেষ্টা করছে।
তবে এম২৩ দাবি করে, সেনাবাহিনীই যুদ্ধবিরতি ভেঙে প্রথম হামলা চালিয়েছে। বছরের শুরুতে পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ এলাকা দখলে নেওয়ার পর এই সংগঠনের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতে হাজারো মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
ওয়াশিংটনে ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ইনস্টিটিউট অব পিস’-এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, এটি আফ্রিকা ও বিশ্বের জন্য ‘একটি মহান দিন’।
তার ভাষায়, তিনি দুই নেতার ওপর আস্থা রাখেন এবং আশা করেন, চুক্তির প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তারা নিজেদের জনগণের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারবেন। এর আগে গত জুনে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দিয়ে আরেকটি সমঝোতা সই করিয়ে সেটিকে তিনি ‘গৌরবের বিজয়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
দুই দেশের সম্পর্ক বহু বছর ধরেই টানাপোড়েনে। কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে একে অপরকে সংঘাতের জন্য দায়ী করেই আসছিলেন। এবার তারা সরাসরি চুক্তিতে সই করলেন। অনুষ্ঠানে কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, টোগোর নেতারা এবং উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন। কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কাগামে ট্রাম্পকে ‘নিরপেক্ষ’ নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, তার বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি দুই দেশের জন্য একটি স্পষ্ট ও কার্যকর পথ তৈরি করেছে। শিসেকেদি বলেন, তিনি ‘গভীর কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ’ অনুভব করছেন এবং আশা করেন রুয়ান্ডা চুক্তির ‘সব শর্ত ও চেতনা’ মেনে চলবে।
এম২৩ প্রতিনিধিদের এই অনুষ্ঠানে রাখা হয়নি; তারা কাতারের মধ্যস্থতায় কঙ্গো সরকারের সঙ্গে আলাদা আলোচনায় ব্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, দুই দেশের বিরোধ কমলে খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ মিলবে। ট্রাম্প অনুষ্ঠানে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলো’ কঙ্গো ও রুয়ান্ডায় কাজ করতে যাবে। তার দাবি, এতে ‘সবাই অনেক অর্থ আয় করবে’।
রুয়ান্ডা দীর্ঘদিন ধরেই এম২৩-কে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করছে, যদিও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী এম২৩-এর সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদ্রোহীরা ২০১২ সালে সংগঠনটি পুনর্গঠন করে এবং এবার প্রায় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই গোমার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমঝোতা স্থায়ী শান্তি আনবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ব্রাম ভেরেলস্ট জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি এবং এম২৩ ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। তার মতে, এই চুক্তি পরিস্থিতি পরিবর্তন করবে এমন নিশ্চয়তা নেই, তবে দুই দেশের নেতারা এখন জনসম্মুখে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাদের ওপর জবাবদিহি বাড়তে পারে।
এ বছর এম২৩ ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গোমা ও বুকাভুসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করেছে।




