ইউরোপমুখী অভিবাসীদের করুণ মৃত্যু, মিলছে না হদিস
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৫৩:৩৪,অপরাহ্ন ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | সংবাদটি ৪৫ বার পঠিত
ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যমের এক যৌথ অনুসন্ধান জানিয়েছে, বলকান রুটে অভিবাসীদের মৃত্যু ঘটলেও তার কোনো হদিস থাকে না। মরদেহ অনেক সময় এমন কবরে সমাধিস্থ করা হয় যেগুলো শনাক্তেরও কোনো উপায় থাকে না।
তুরস্ক থেকে বলকান রুট ধরে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ পাড়ি দিয়ে জার্মানি প্রবেশের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে, ২০১৫ সালের পর ২০২২ সালে আবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এই পথ পাড়ি দিয়েছেন। ইউরোপের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে এই তথ্য।
তবে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এই রুটে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের হার কমলেও সম্প্রতি তা আবার বেড়েছে। দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশগুলো সীমান্তে অনেককে আটক করেছে, যারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র ছাড়াই সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এর, ‘মিসিং মাইগ্রেন্টস’ প্রকল্প জানাচ্ছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত বলকান রুটে ৪৪টি মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম লাইটহাউস রিপোর্টসের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত আট বছরে বলকান সীমান্ত পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্ৎসেগোভিনা সীমান্তে বেড়া দেওয়ার পাশাপাশি তল্লাশি বাড়িয়েছে। ফলে এসব সীমান্ত পাড়ি দেওয়া আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে, অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের মতে এসব বাধা অভিবাসীদের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। এগুলোর কারণে তাদের যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে এবং তারা আরও ঝুঁকিপূর্ণ রুটে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ রুটের মধ্যে রয়েছে মাইন পুঁতে রাখা অঞ্চল, ঘন জঙ্গল, খরস্রোতা নদী এবং পর্বতমালা।
নিশানা ছাড়া সমাধি শেষ ঠিকানা
যাত্রাপথের ব্যাপ্তি এবং ঝুঁকি দুর্ঘটনার শঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিরূপ আবহাওয়া, বিশেষ করে গ্রীষ্মে মাত্রাতিরিক্ত গরম এবং শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডায় অনেক অভিবাসী জীবনের ঝুঁকিতে পড়েন।
বলকান রুটে এখন অবধি ঠিক কতজন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। পুরো রুট থেকে সংগ্রহ করা কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে নেই। আর অনেক অভিবাসী যেহেতু এই রুটে প্রবেশের সময় নথিভুক্ত হন না এবং যেখানে যাচ্ছেন সেখানেও তাদের সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক তথ্য থাকে না, তাই তারা তাদের গন্তব্যে না পৌঁছানোর তথ্য অনেক সময় অজানাই থেকে যায়।
রেডিও ফ্রি ইউরোপ, ডেয়ার স্পিগেল, এআরডি, আইনিউজ এবং যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদকে সঙ্গে নিয়ে লাইটহাউস রিপোর্টস বুলগেরিয়া, সার্বিয়া এবং বসনিয়ার সীমান্তে অভিবাসী মৃত্যুর ব্যপ্তি অনুসন্ধান করেছে।
তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ‘ইউরোপের সীমান্তে যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি মানুষ হচ্ছে তা জীবন থেকে মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ মৃত অভিবাসীদের পরিচয় জানতে বা তাদের পরিবারকে মৃত্যুর খবর জানাতে বলতে গেলে কিছুই করে না। এই ঘাটতি মেটাতে চিকিৎসক, বেসরকারি উন্নয়নকর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। শনাক্ত করা যায়নি এমন মরদেহগুলো শেষমেষ মর্গে জমতে থাকে কিংবা কোনো রকমের শনাক্তের উপায় না রেখেই সেগুলো সমাহিত করা হয়।’
লাইটহাউস রিপোর্টস স্বীকার করেছে যে কিছু মরদেহ কখনোই আর পাওয়া যাবে না। ফলে এটা নিশ্চিত যে বলকান রুটে অভিবাসী মৃত্যুর বিস্মৃত তথ্য জানা যাবে না।
বুলগেরিয়া-সার্বিয়া-বসনিয়া রুটের কাছে ছয়টি মর্গ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধনকারীরা ২০২২ সাল থেকে এখন অবধি সম্ভাব্য অভিবাসী মৃত্যুর ১৫৫টি ঘটনার সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৯২ জন চলতি বছর মারা গেছেন।