বৈদেশিক ঋণে সুদ-আসল পরিশোধের চাপ বেড়েই চলেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৮:৪৯,অপরাহ্ন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | সংবাদটি ১১২ বার পঠিত
ডলার সংকটের মধ্যে চাপ বাড়াচ্ছে বিদেশি ঋণ ও সুদ পরিশোধ। এক বছরের ব্যবধানে শুধু সুদ পরিশোধে বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ঋণ মিলছে না। শুধু জানুয়ারি মাসেই বৈদেশিক ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ হয়েছে পরিশোধে।
বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশি ঋণের অর্থছাড় যেমন কমেছে, উল্টো দিকে বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ও সুদের চাপ বেড়েছে অনেক।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। আর গত জানুয়ারি মাসে বৈদেশিক ঋণ ছাড় হয়েছে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আর পরিশোধ করতে হয়েছে ২৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইআরডির প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে উন্নয়ন সহায়তা প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩০৬.১ শতাংশ, ঋণের অর্থছাড় বেড়েছে ৩.২৬ শতাংশ। একইসঙ্গে সরকারের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৪৪.৫২ শতাংশ।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে শুধু সুদের অর্থ পরিশোধ বেড়েছে ১০৭.৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সুদ পরিশোধের জন্য ৭৬০.৭৪ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে। এ সময়ে সরকার বিভিন্ন ঋণের আসলের ১.০৯ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।
উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নতুন ৭.১৭ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের প্রতিশ্রুত ১.৭৬ বিলিয়ন ডলার থেকে অনেকটাই বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেন, ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়।
তারা বলেন, অর্থবছরের শুরু থেকে অনেকগুলো প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে ঋণচুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এই সাফল্য এসেছে। বিপরীতে আগের অর্থবছরে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নেওয়ায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের চুক্তি বিলম্বিত হয়েছিল।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, বেশিরভাগ ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রধান তিন উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক ও জাপান থেকে। তিন উন্নয়ন সহযোগী সম্মিলিতভাবে ৬.০৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে সর্বোচ্চ ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে এডিবি থেকে, মোট ২.৬২ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি এই সময়ে জাপান থেকে ২.০২ বিলিয়ন এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ১.৪১ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়কালে উন্নয়ন সহায়তা সংস্থাগুলো মোট ৪.৩৯ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।
এদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদহার বেড়েছে, যা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়িয়েছে।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
এছাড়া এ সময়ে বাংলাদেশের বাজারভিত্তিক সুদহারে ঋণগ্রহণও ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলে দেশের সুদ পরিশোধ বাড়ছে।
এডিবি থেকে বাংলাদেশের ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাজারভিত্তিক সুদে নেওয়া। এছাড়া এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকেও বাজারভিত্তিক সুদহারে ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ।
তাছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকেও সীমিত পরিসরে বাজারভিত্তিক সুদহারে ঋণ নেয়।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান আন্তর্জাতিক সুদের হার অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ১.১৯ বিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করবে বলে প্রক্ষেপণ হয়েছে। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩), বাংলাদেশের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৯৪৪ মিলিয়ন ডলার, এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪৬৯ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেন, সুদ পরিশোধের পাশাপাশি আসল পরিশোধের চাপও বাড়বে। বিভিন্ন বাজার সহায়তা ঋণ এবং কর্ণফুলী টানেল ও পদ্মা রেল লিঙ্কের মতো মেগা প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর এখন এসব ঋণের আসলের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।