কোরবানির গোশতের সামাজিক বণ্টন: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:০১:৫৬,অপরাহ্ন ০৪ জুন ২০২৫ | সংবাদটি ১৪ বার পঠিত

কোরবানি ইসলামে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এটি হতে হবে শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং শরিয়তের নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী। তবে সমাজে কোরবানির গোশতের বণ্টন নিয়ে নানা প্রচলিত রীতিনীতি দেখা যায়, যার কিছু শরিয়তসিদ্ধ নয়।
কিছু এলাকায় প্রচলিত একটি নিয়ম হলো—কোরবানিদাতাকে বাধ্যতামূলকভাবে গোশতের একটি নির্দিষ্ট অংশ সমাজে জমা দিতে হয়, যা পরে কোরবানি করা-না-করা সবার মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হয়। ইসলামী স্কলাররা বলছেন, এই পদ্ধতি শরিয়তসম্মত নয়।
ফুকাহায়ে কেরামের ব্যাখ্যায়, কোরবানির গোশত দান করা মুস্তাহাব (সুন্দর ও সওয়াবের কাজ), কিন্তু এটি কোরবানিদাতার ইচ্ছাধীন। কেউ চাইলে নিজের জন্য রাখতে, আত্মীয় বা দরিদ্রকে দিতে পারেন। কারো ওপর কোনো অংশ বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া শরিয়ত অনুযায়ী ‘নাজায়েজ’ (অনুমোদনযোগ্য নয়)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “কারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া হালাল নয়” (মুসনাদে আহমাদ)। সুতরাং, কোরবানিদাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার গোশতের কোনো অংশ নেয়া বা বণ্টন করা ইসলাম সমর্থন করে না।
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করছেন, সমাজে কিছু মানুষের উপার্জন হারাম পন্থায় হয়ে থাকে। সেই আর্থিক উৎস থেকে কোরবানি করা পশুর গোশত সবাইকে বণ্টন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কারণ হারাম উপার্জনে কোরবানি বৈধ নয়।
ইসলাম মতে, কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম: এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিন, এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-প্রতিবেশী ও এক-তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারের জন্য। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। কেউ ইচ্ছা করলে পুরোটা নিজে রাখতে বা পুরোটাই দান করতেও পারেন।
সারসংক্ষেপে, কোরবানির গোশতের সামাজিক বণ্টন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হতে পারে, তবে তা স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে হওয়াই ইসলামসম্মত। বাধ্যতামূলক বা নির্ধারিত কোটায় জমা দেয়ার মতো প্রথা শরিয়তের মূলনীতি লঙ্ঘন করে। ইসলাম উৎসাহ দেয় আন্তরিকতা, স্বেচ্ছাবদান এবং সদিচ্ছায় পরিচালিত সমাজসেবামূলক কর্মে।