প্রচারে ব্যস্ত আনোয়ারুজ্জামান, আরও সময় নেবেন আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৯:১৭,অপরাহ্ন ০১ মে ২০২৩ | সংবাদটি ৫৪ বার পঠিত

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে সরব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। করছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি সভা। তার প্রচারমূলক ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকা।
তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দিলেও বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা থাকায় এখন পর্যন্ত নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারছেন না কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
গত ২ এপ্রিল লন্ডন সফরে গিয়ে ১৭ এপ্রিল তিনি দেশে ফেরেন আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও দলীয় একটি ইফতার মাহফিলে তারেক রহমানের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন। দেশে ফেরার দিন সকালে মেয়র আরিফ ঢাকায় কেন্দ্রীয় দুজন নেতার সঙ্গে দেখা করে বিকেলে সিলেটে পৌঁছান।
লন্ডন সফর শেষে তিনি সিলেটে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের পর জানাবেন তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ পরও জানা যায়নি তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা।
এদিকে মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত হওয়া জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বসে নেই। গত সপ্তাহে তিনি সিলেটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এসময় নগরীর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। পরের দিন বুধবার নগরীর সুবিদবাজার, কোর্টপয়েন্ট, বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী ও দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অন্যদিকে এবারের সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই বাম দলগুলোর। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদেরও নির্বাচন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। ইসলামী দলগুলোর কেউ কেউ প্রার্থী দিলেও গেল নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াতে ইসলামী এবার কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। বাম দল এবং জামায়াতের নেতারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী ছাড়া নির্বাচন হলে অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী- এমনটাই মনে করছেন নগরবাসী। তবে টানা দুইবারের সিসিক মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় এবারের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফল পাল্টে যাওয়ার ভয়ে আছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ কারণে আগামী নির্বাচনে তার প্রার্থিতার বিষয়টি পরিষ্কার করতে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ২০ মে জনসভা করে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন আরিফ।
আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে আরিফুল হক সতর্কে পা ফেলছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজ দলের আস্থাভাজনদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এমনকি তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন। সম্প্রতি খুব কাছের লোকদের নিয়ে একটি অভিজাত হোটেলে বৈঠক করেন মেয়র। বৈঠকে তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা সাদিকুর রহমান সাদিক ও সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবদুস সামাদ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি যে কারণে নির্বাচনে যেতে চায় না তার অন্যতম হচ্ছে ফল পাল্টে দেওয়ার রাজনীতি। আর ইভিএম হচ্ছে ফল পাল্টে দেওয়ার সেই মেশিন। কারণ ইভিএমে সব ‘সিস্টেম’ করা থাকে। ইতোমধ্যে অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এতেই প্রতীয়মান হয় সুষ্ঠু নির্বাচনের যে ধারা সেটি এবারের নির্বাচনে এখনও অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, সিলেটের লোকজন আমাকে চায়। আমি তাদের কথা ফেলতে পারছি না। এ কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
অন্যদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে দলের ভেতরে আতঙ্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজনরা। গত নির্বাচনের মতো নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। যদিও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বরাবরই দাবি করেছেন দলে কোনো বিভেদ নেই এবং তাকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সিলেট আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারুজ্জামানের খুব কাছের এক নেতা জানান, ব্যক্তি আনোয়ারুজ্জামান প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে আছেন। তবে দলের কোনো সিনিয়র নেতা তার পাশে নেই।
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার রাতে সিটি নির্বাচন নিয়ে নগরীর একটি হোটেলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আরিফকে ‘চ্যালেঞ্জ’ দেওয়া হয়েছে। এরপর গত শনিবার রাতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক। সেখানে কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত ছিলেন।
এসব বিষয় নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি আশাবাদী। দলে কোনো বিভেদ নেই। এছাড়া নির্বাচনের এখনও দেড় মাসের বেশি সময় বাকি। এই সময়ের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের মনে যে দুঃখ ছিল সেটি অনেকটা কেটে গেছে। এছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।