“কুফা নয়, কিসমত! বাবার সামনেই ছক্কার বৃষ্টি অভিষেকের”
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫৭:২৭,অপরাহ্ন ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | সংবাদটি ১৮ বার পঠিত

অভিষেক শর্মার শুরুটা ছিল ঠিক যেন আগুনে ঝড়। প্রথম ৮ বলে ৬টি বাউন্ডারি—মাত্র ২৮ রানেই মাঠ কাঁপিয়ে দেন এই বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু নবম বলেই ছন্দপতন, ক্যাচ উঠিয়ে ফেলেন ফিল্ডারের হাতে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের গ্যালারিতে তখন হঠাৎ থমথমে।
তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছিলেন এক বিশেষ দর্শক—অভিষেকের বাবা, রাজ কুমার শর্মা। জীবনে এই প্রথমবার ছেলের আইপিএল ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন মাঠে। আর সেই দিনই যদি অভিষেক শুরুতেই আউট হয়ে যান, তাহলে কেমন লাগে বাবার মন? রাজ কুমারের মনে হলো, তিনিই বুঝি কুফা হয়ে এসেছেন!
কিন্তু ক্রিকেট, যেমনটা প্রায়ই হয়, নাটকীয়তা ভালোই বোঝে। অভিষেক যশ ঠাকুরের বলে আউট হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু বলটি নো হওয়ায় ফিরে আসার সুযোগ মেলে। এরপর যা করলেন, তা রীতিমতো ইতিহাস। একের পর এক চার-ছয়ে পাঞ্জাব কিংসের বোলারদের উড়িয়ে দিয়ে গড়লেন রেকর্ড—এক ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আইপিএলে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস: ১৪১ রান।
ম্যাচ শেষে রাজ কুমার শর্মা হেসে বলছিলেন, “আমি একটু কুসংস্কারগ্রস্ত মানুষ। সব সময় ভাবতাম, মাঠে থাকলে অভি হয়তো ভালো খেলবে না। আজ যখন ‘নো’ বলে বেঁচে গেল, ওই ৩০ সেকেন্ড আমি শুধু নিজেকেই দোষারোপ করছিলাম। আর যখন সে গ্যালারিতে ছয় মারতে শুরু করল, তখন মনে হলো—আমি বুঝি মাটি ছুঁতে পারছি!”
২০১৯ সাল থেকে হায়দরাবাদের হয়ে খেলা অভিষেক ২০২3 সালে দারুণ ফর্মে ছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে শুরুটা ছিল ব্যর্থতায় ভরা—পাঞ্জাব ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৫ ইনিংসে মাত্র ৫১ রান। এরই মাঝে পাঞ্জাবের অমৃতসরে থাকা বাবা–মাকে হায়দরাবাদে আমন্ত্রণ জানান তিনি। বিমানের টিকিটও নিজেই কেটে দেন। রাজ কুমার কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও ছেলের অনুরোধে রাজি হয়ে উড়াল দেন।
অভিষেক জানালেন, পুরো দলই তাঁর মা–বাবার আগমনের অপেক্ষায় ছিল। তাঁর কথায়, “সবাই বিশ্বাস করছিল, আমার মা–বাবা সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে হায়দরাবাদে আসবেন।”
ওই বিশ্বাস মিথ্যা হয়নি। টানা চার ম্যাচ হেরে বসে থাকা হায়দরাবাদ পাঞ্জাব কিংসকে উড়িয়ে দেয় ৮ উইকেটে। আর ক্রিকেট দুনিয়ায় জন্ম নেয় আরেকটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প—এক বাবার প্রথম ম্যাচ দেখতেই ছেলের ক্যারিয়ার–সেরা পারফরম্যান্স।