বিয়ানীবাজারে কেয়ারটেকার নিখোঁজ, বিছানার রক্ত নিয়ে রহস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৬:৪৬,অপরাহ্ন ০২ এপ্রিল ২০২৩ | সংবাদটি ৫৮ বার পঠিত
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পূর্বপাড় এলাকার আব্দুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার ভোরে পরিবারের সদস্যরা কেয়ারটেকার তাইতুল ইসলাম নাহিদের ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে যান। সেখানে তারা শুধু নাহিদের রক্তে ভেজা বিছানা দেখতে পান। ঘরের মেঝে এবং বারান্দায়ও ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।
গৃহকর্তা তাৎক্ষণিক প্রতিবেশী ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। ভোর ৪টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নাহিদের সন্ধান মেলেনি।
খবর পেয়ে পর্যায়ক্রমে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) জাকির হোসাইন, বিয়ানীবাজার থানার ওসি তাজুল ইসলাম এবং বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পিবিআই ও ডিবি পুলিশের পৃথক দল ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করে।
তাইতুল ইসলাম নাহিদ নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার বড়ভিটাবাজার এলাকার বাসিন্দা। ২০১৭ সাল থেকে তিনি আব্দুল হেকিমের বাড়িতে কাজ করেন। এ ঘটনায় নাহিদের খুন হওয়া এবং কোনো পশু জবাই করে তার রক্ত বিছানায় ঢেলে তার পালিয়ে যাওয়া– দুটি দিক আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বিশেষ সংস্থার সদস্যরা।
পরিবারের সদস্য ফুয়াদ আহমদ জানান, আব্দুল হেকিমের বসতঘর থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরের পুকুরপাড়ে আধাপাকা ঘরে থাকত নাহিদ। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে সেহরি খাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পায়। সে বাইরে এসে নাহিদকে ডাক দিলে কোনো সাড়া না পেয়ে তার ঘরে গিয়ে এই অবস্থা দেখতে পায়।
আব্দুল হেকিম জানান, নাহিদ আমাদের ক্ষেত-খামারগুলো দেখাশোনা করার পাশাপাশি হাঁস-মোরগ ও ছাগল পালন করত। একই সঙ্গে বাড়ির পাশে একটি মাছের ফিশারিও দেখাশোনা করত।
রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের ওপর এ ঘটনার পুরো মোটিভ নির্ভর করছে বলে জানান এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
তিনি জানান, রক্ত কোনো মানুষের না পশুর, সেটি আগে জানা প্রয়োজন। রক্ত বিছানা, মেঝে এবং বাইরে ছড়িয়ে রয়েছে। তার পর ঘটনার কাছাকাছি সময়ে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এর পরও মাটিতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। নাহিদ খুন হলে কী কারণে হতে পারে, সে দিকটি তদন্ত করছে পুলিশসহ পিবিআই ও ডিবি। বিছানার তলা থেকে নাহিদের দুটি ডায়রি পাওয়া গেছে। সেখানে অনেকের সঙ্গে তার টাকা-পয়সা লেনদেনের হিসাব লেখা রয়েছে। আবার বেশ কয়েকজন তরুণীর নাম রয়েছে, তাদের সে ভালোবাসত। নারী কিংবা টাকা-পয়সাসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে কিছু হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আবুল কাশেমের নার্সারিতে চার বছর কাজ করেছে নাহিদ। পরে সে আব্দুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকারের কাজ নেয়। এলাকায় আবুল কাশেম নাহিদকে নিজের ভাই বলে পরিচয় দিতেন এবং টাকা-পয়সা লেনদেন করতেন।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি তাইজুল ইসলাম বলেন, ক্রাইম সিনে পাওয়া রক্তের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর জানা যাবে, কেয়ারটেকার নাহিদ খুন হয়েছে কিনা। একই সঙ্গে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে আমরা ভোর থেকে কাজ করছি কিন্তু ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশ বাড়ির চারপাশের এক-দেড় কিলোমিটার এলাকা তল্লাশি করে কিছু পায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) জাকির হোসাইন ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন।